বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উত্তর পেচুঁল গ্রামে গত শনিবার বিকেলে আদালতের নির্দেশে এক সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুনজিলা খাতুনকে স্ত্রীর মর্যাদা ও তার ছয় বছরের কন্যা ফজিলা খাতুনকে কন্যার স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে তুলে নিতে বাধ্য হন ধর্ষক ফজলুর রহমান (৫৫)।
বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-২-এর বিচারক আব্দুর রহিমের নির্দেশে বিয়ের অনুষ্ঠানে স্পেশাল এপিপি অ্যাডভোকেট তৃপ্তি বেগম, এপিপি অ্যাডভোকেট রেখা ও পরিদর্শক হিসেবে দৈনিক বাংলা বুলেটিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তারেক হাসান শেখ উপস্থিত থেকে বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। পরে মুনজিলা খাতুনকে ফজলুর রহমানের বাসায় তুলে দেয়া হয়।
গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত ফজলুর রহমান স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছে। তিনি স্টক বিজনেসসহ সুদে টাকা দেয়ার ব্যবসা করেন। মুনজিলা খাতুনের পরিবারে বড় ভাই খলিলুর রহমান ছাড়া কেউ নেই। খলিলুর একটি দইয়ের কারখানার শ্রমিক। ফজলুর রহমানের বাড়ির পাশেই একটি ছাপড়া (বেড়া) ঘরে তারা থাকতো। সেখানে জোর করে প্রবেশ করে মুনজিলা খাতুনকে ধর্ষণ করেছিল ফজলুর।
আলোচিত এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-২-এর স্টেনোগ্রাফার লিয়াকত আলী, সেরেস্তাদার এএসএম মিজানুর রহমান, আদালত সহকারী ইব্রাহীম হোসেন, সাহাদৎ হোসেন, ইমরান হোসেন, বিচারকের ব্যক্তিগত গানম্যান শ্রী মুকুল চন্দ্র ও ড্রাইভার শাহরিয়ারসহ গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক বাসিন্দা।
বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল এপিপি অ্যাডভোকেট তৃপ্তি বেগম জানান, বাবা-মা হারা বাক প্রতিবন্ধী নারী মুনজিলা খাতুন প্রতিবেশী ফজলুর রহমানের ধর্ষণের শিকার হয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ধর্ষিত হয়ে ২৬ নভেম্বর একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। ধর্ষণের ঘটনার পর ফ্রেব্রুয়ারি মাসে শেরপুর থানায় প্রথমে ধর্ষণ মামলা করা হয়।
এরপর সেই রিপোর্ট আদালতে পাঠানো হলে ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পরিবর্তন করে শুনানি শুরু করা হয়। পিতৃ পরিচয় ও সামাজিক স্বীকৃতির জন্য বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ আদালতে ১০৫/১৩ নারী শিশু মামলা দায়ের করেন ওই নারীর ভাই খলিলুর রহমান। কিন্তু আসামি তাকে স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ২২ জুলাই স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ভিকটিম ও আসামিদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট পাওয়ার পর কন্যার পিতৃত্ব নিশ্চিত হওয়া যায়।
এরপর আদালতের নিদের্শে গত ১৯ নভেম্বর দেড় লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে ধর্ষক ফজলুর রহমানের সঙ্গে বাকপ্রতিবন্ধী মুনজিলা খাতুনের বিয়ের কাবিননামা রেজিস্ট্রি করা হয়।
এরপর শনিবার বিকেলে আদালতের নির্দেশের অংশ হিসেবে আদালতের কর্মকর্তা, পরিদর্শক, আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে বাকপ্রতিবন্ধী মুনজিলা খাতুন (৩৬) ও তার কন্যা ফজিলা খাতুনকে (৬) ঘরে তুলে নেন মামলার আসামি ফজলুর রহমান। অসহায় এই মেয়ের বিয়েতে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকের খাবারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নাটোরের ডিসি বগুড়ার এক ছাত্রীকেও বিরক্ত করতেন!
নাটোরের জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমানকে অবশেষে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলো ।
রোববার দুপুরে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়। তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে গোলামুর রহমানের পরিবর্তে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. শাহরিয়াজ। বদলির নির্দেশে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে জনস্বার্থে জারিকৃত রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব আনিসুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে এই বদলি ও নিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়।
নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট এবং সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছেছে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে। নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কু-প্রস্তাব দেয়ায়, ভুক্তভোগী ওই ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
এছাড়া নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোলামুর রহমান।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোরের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন গোলামুর রহমান। বিসিএসএসের ২০তম ব্যাচের এই ক্যাডার অফিসার সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন শিপিং কর্পোরেশনের ম্যানেজার হিসেবে।
সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে ২০তম জেলা প্রশাসক হিসেবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তবে যোগদানের পর থেকেই সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতা এবং নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে তার প্রতি ক্ষুদ্ধ ছিল নাগরিক সমাজ।
এদিকে জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান যোগদান করার পর তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠে নারী ম্যাজিস্ট্রটকে যৌন হয়রানির বিষয়টি।
সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে এক নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার এবং মোবাইল ফোনে কু-প্রস্তাব দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমানের এই অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্নভাবে ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে হয়রানি করেন তিনি। পরে ভুক্তভোগী ওই নারী ম্যাজিস্ট্রেট লিখিতভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে ওই নারী ম্যাজিস্ট্রেট গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
শুধু নারী ম্যাজিষ্ট্রেট নয়, জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমানের বিরুদ্ধে বগুড়া আর্ট কলেজের এক ছাত্রীকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কু-প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
গত ৭ নভেম্বর নাটোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে পুরাতন ডিসি বাংলো পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান। এসময় ডিসি বাংলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ডিসি অফিসের মাস্টার রোলের কর্মচারী মোতালেব হোসেন গেটের চাবি আনতে দেরি করায় শারীরিকভাবে তাকে মারপিট করেন ডিসি।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক গোলামুর রহমান বলেন, কখনও কখনও তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়। কেউ হ্যাক করে এই কাজগুলো করে থাকতে পারে।
ফেসবুক আইডি হ্যাক হলেও আপনি আইনগত ব্যবস্থা নেননি কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলে। তবে আমি ফেসবুকের বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাই না। তবে কোনো কর্মচারীকে মারপিটের ঘটনা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে যৌন হয়রানি, কর্মচারীকে মারপিট এবং সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতাসহ ৬ দফার একটি গোপন প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।